বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁও নিউজ :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান মনিরের বিরুদ্ধে অনুমোদনহীন মেলার বসানোর অভিযেগ উঠেছে। শুক্রবার থেকে নেয়াগাঁও ইউনিয়নের পরমেশ্বরদী এলাকায় বারদী সড়কের পাশে কৃষি জমিতে এ মেলা বসিয়েছেন। এ মেলার স্থানীয় প্রশাসন কোন অনুমতি দেয়নি। তবুও তিনি এ মেলার আয়োজন করেছেন। বারদীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৩৩তম তীরোধান উৎসব উপলক্ষে আশ্রম ও আশপাশের এলাকায় মেলা বা কোন দোকান পাট বসার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবুও তিনি কৃষি জমিতে তিনদিনের জন্য দোকান প্রতি ৫-৭হাজার টাকা করে নিয়ে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই মেলার আয়োজন করেছেন। লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রমের পাশের এ মেলার কারণে তালতলা বারদী সড়কে যানজটের সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এছাড়াও আধিপত্য কেন্দ্র করে মেলায় সংঘর্ষের আশংঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার বারদীতে অবস্থিত শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম। শনিবার লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৩৩তম তীরোধান উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ,ভারত, নেপাল, ভুটান, ও শ্রীলঙ্কা থেকে বিপুলসংখ্যক লোকনাথ ভক্ত বারদী আশ্রমে আসতে শুরু করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক লাখ লোকনাথ ভক্তের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে আশ্রম এলাকা। স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর আশ্রম এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য কোন প্রকার মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে বারদীতে আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবুও নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মনিরুজ্জামান মনির, সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের সভাপতির ভাই মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১২জনের একটি সিন্ডিকেট প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতার ছত্রছায়ায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া মেলা বসিয়েছেন। এতে করে আশ্রম এলাকায় যানজটের সৃষ্টির আশংকা করছেন এলাকাবাসী। ওই ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে মেলা থেকে প্রতি দোকান থেকে ৫-৭হাজার টাকা করে উত্তোলন করেছেন।
এদিকে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান মনির স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার প্রভাবে এর আগেও পরমেশ্বরদী বাজারে সরকারী জমি দখল করে টিনশেড মার্কেট নির্মাণ করেন। এ বিষয়ে সোনারগাঁও নিউজসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় এ ইউপি সদস্যের দখলদারীত্ব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনের পর স্থানীয় প্রশাসন তার টিনশেড মার্কেট গুড়িয়ে দেয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মনিরুজ্জামান মনির নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিতর্কিত কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। নোয়াগাঁও ইউনিয়ন জাপার ৭নং ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করায় তাকে দল থেকে সম্প্রতি বহিস্কার করেছেন। এছাড়াও সরকারী জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করার পর তার মার্কেট গুড়িয়ে দেয় প্রশাসন। সে বর্তমানে কৃষি জমিতে অনুমতি না নিয়ে মেলায় বসিয়ে বিতর্কিত হন। এ মেলার কারণে এ এলাকা যানজটের নগরীতে পরিণত হবে। এছাড়াও এ মেলায় আধিপত্য সংঘর্ষের আশংঙ্কা রয়েছে।
অভিযুক্ত মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আওয়ামীলীগের সভাপতি সন্ধ্যায় ডেকে আমাকে মেলার আয়োজন করতে বলেছেন। অনুমোদন নিতে হবে না বলে জানিয়েছেন। অনেক দোকানদার মেলায় এসে দোকান বসতে না দেওয়ায় হতাশ হয়েছেন। এ কারণে তিনি মেলার আয়োজন করতে বলেছেন। তবে মেলার দোকান থেকে কোন টাকা নেওয়া হচ্ছে না।
নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সামসুল আলম সামসু বলেন, মেলার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, প্রতি বছর লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তীরোধান উৎসবে তিনদিন ব্যাপী মেলা বসে। এ বছর মেলার কোন অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। ফলে মেলার আসা দোকান মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তবে মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজওয়ান উল ইসলাম বলেন, মেলার কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোজ নিয়ে আয়োজকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত দিন