শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন
হাসান মাহমুদ রিপন :
ফড়িং এক পতঙ্গের নাম। পুকুর, ডোবা, কিংবা জলাভূমির কাছে নির্জন জায়গায় বাতাসে উড়তে কিংবা গাছের ডাল-পাতার ওপর নিশ্চল হয়ে ফড়িংকে বসে থাকতে দেখা যায়। আর ছোট ছোট শিশুরা ফড়িং দিয়ে খেলা করার জন্য ডালে বসে থাকা ফড়িংটিকে চুপিচুপি করে ফড়িংয়ের লেজ কিংবা পাখা ধরে আনন্দ পায় এবং শিশুরা ওই ফড়িংটিকে ধরে লেজে সুতা বেঁধে আকাশে উড়িয়ে আবার মজা করে খেলাধুলা করতে খুব ভালবাসে।
ফড়িংয়ের সরু লম্বা শরীর, মাথা, বুক এবং উদরে বিভক্ত। মাথাটি গোল, এদিক ওদিক ঘোরাতে পারে। খুব ছোট সূক্ষ শুঁড় আছে। ফড়িংয়ের উদর অংশ নরম, লম্বা ও নলের মতো। এই নলাকার অংশের শেষ প্রান্তে আড়াআড়িভাবে একটি ছিদ্র থাকে। এর সাহায্যে বর্জনীয় বস্তু দেহ থেকে নির্গত করে। বুকের কাছে দু’জোড়া পাতলা,খসখসে, অর্ধস্বচ্ছ ডানা আছে। দেহের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে ওপরের দিকে আবদ্ধ। ডানা সব সময প্রসারিত অবস্থায় থাকে। কখনও ভাঁজ করতে পারে না। খুব জোরে ডানা নাড়াতে পারে, সে জন্য উড়ার সময় ডানা থেকে শব্দ হয়।
ফড়িংয়ের ডানাগুলো বেশ লম্বা। দেহের সঙ্গে ডানাগুলোর খুব ছোট সংযোগ আছে। ডানার বাইরের দেহের প্রান্ত সোজা এবং ভেতরের প্রান্ত গোলাকার। গঠন কাঠামো দৃঢ় ও কার্যকর করার জন্য পাতলা ডানায় প্রচুর জালকের মতো সূক্ষু শিরা বিন্যাস থাকে। এর ফলে বাতাসের চাপে ডানাগুলো ছিঁড়ে যায় না, উড়ন্ত অবস্থায় দেহের ওজনের সঠিক ভারসাম্য বজায় থাকে। ন্ত বাতাসের মধ্যে বিশেষভাবে বেঁকে সঞ্চালিত হওয়ার জন্য ফড়িং যে কোন স্থির থাকতে পারে। ফড়িংয়ের ডানাগুলো পায়ের সঞ্চালন দিয়ে পরোক্ষভাবে নড়াচড়া করে। এছাড়া বুকের পেশির সউড়ন্ত অবস্থায় খুব দ্রুত নির্দিষ্ঠভাবে ডানাগুলো সঞ্চালিত হয়। এর ফলে দেহের ওপরের অংশে নিন্মচাপের অঞ্চল ও নিচে একটি উচ্চ চাপের অঞ্চল তৈরি হয়। ডানার সামনে ও পেছনের প্রাঞ্চালন দ্রুত ডানা নাড়াতে সাহায্য করে। পায়ের বিশেষ সঞ্চালনের জন্য ফড়িং স্থির অবস্থা থেকে হঠাৎ উড়তে পারে। ফড়িং প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটার গতিতে উড়তে পারে। উড়ার সময় হঠাৎ বাতাসে স্থির হয়ে দ্রুত সঞ্চালিত ডানার সাহায্যে ভেসে থাকতে পারে। আবার দিক পরিবর্তন করে বিপরীত দিকেও দ্রুত উড়ে যেতে পারে।
ফড়িং নিয়ে আরেকটি কথা না বললেই নয়। এ ফড়িং দেখেই বিজ্ঞানীরা হেলিকপ্টার তৈরি করেছিলেন। প্রকৃতির মধ্যে ফড়িংই একমাত্র পতঙ্গ যার চেহারা এবং উড়ার সঙ্গে মিল আছে হেলিকপ্টারের। হেলিকপ্টার আবিস্কারের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, এই অদ্ভুত আকাশযান সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ফ্রান্সে। আমাদের অতি পরিচিত ফড়িংয়ের শরীরের কাঠামো, ডানার গঠন বৈশিষ্ঠ্য, উড়ার পদ্ধতি লক্ষ্য করে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ‘এটিয়েন উইমিচেন’ প্রথম পরীক্ষামূলক হেলিকপ্টার তৈরি করেছিলেন। তারপর নানা গবেষণার মাধ্যমে হেলিকপ্টারের গঠন, কাঠামো বিশেষ প্রপেলারের ব্যবস্থা, স্বল্প পরিসরে সহজে ওঠানামা, নিশ্চল অবস্থা থেকে আকাশে উড়া ইত্যাদির যে উন্নতি ও পরিবর্তন ঘটেছে তার সবটাই ফড়িংয়ের শরীরের গঠনভঙ্গিমা থেকে পরিকল্পিত। ফ্রান্সে এই যুগান্তকারী আবিস্কার সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও এর পশ্চাৎপদে সেই ছোট্ট এ পতঙ্গের যে রীতিমতো অবদান আছে তা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি।
আপনার মতামত দিন