বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁও নিউজ :
নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে সাদিপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও এলাকায় জহিরউদ্দিন আহম্মেদ জয় জমি জালিয়াতি করে বিক্রি ও তার ব্যাংক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নিস্ব হতে চলছে ৪ অসহায় পরিবার। জহিরউদ্দিনের ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে তাদের জমি ও বসত ভিটা হারাতে হবে বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগী পরিবার। জমি জালিয়াতির বিষয়টি সারা দেশ ব্যাপী আলোচিত ঘটনা হয়ে উঠে। গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিরিন খাঁন নামের এক নারী নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে দুই সন্তানসহ আগুন দিয়ে আত্মহননের চেষ্টার ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় পাওয়ার অব এ্যাটর্ণির মাধ্যমে পাওয়া জমি বিক্রির সঙ্গে জড়িত দুই জনকে শিরিন খাঁনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন দুই প্রবীণ আওয়ামীগ নেতা।
তাদের পরিবারের দাবি গ্রেপ্তারকৃত আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হান্নান সাউদ ও আয়েছ আলীকে নির্দোষ দাবী করেন তাদের পরিবার। তাদের দাবি জহিরউদ্দিন আহম্মেদ জয়ের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা ।
আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হান্নান সাউদের বড় ছেলে মো. পারভেজ সাউদ বলেন, তার বাবা আব্দুল হান্নান সাউদও এ জমি জহিরউদ্দিন আহম্মেদ জয়ের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। জহিরউদ্দিন আহম্মেদ জয় তার বাবার কাছে জমিটি পাওয়ার অব এ্যাটর্ণি দেওয়া আগেই তিনি ভারগাঁও মৌজায় ৫১ শতাংশ জমিসহ ৬টি জমির বিপরিতে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা টাকা বেসিক ব্যাংক লিমিটেড কাওরান বাজার শাখা হতে ঋণ গ্রহন করেন। ঋণ নেওয়ার পর থেকে তিনি বিদেশে নিজেকে আত্মগোপন করে রাখে। এ পর্যন্ত তিনি দেশে আসেননি। বর্তমানে এ ঋণ সুদে আসলে সাড়ে ৫কোটি টাকা হয়েছে। তার বাবা পাওয়ার অব এ্যাটর্নি নেওয়ার পর আয়েশ আলীর মাধ্যমে শিরিন খাঁনের কাছে ৬ শতাংশ জমি ১০ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ওই সময়ও কেউ জানতেন না এ জমি জহিরউদ্দিন আহম্মেদ জয় ব্যাংক থেকে জমির বিপরিতে ঋণ নিয়েছেন। বর্তমানে শিরিন খাঁনের মামলা নিষ্পত্তি করতে হলে ব্যাংকের ৫কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে ৪ পরিবার নিঃস্ব হওয়ার পথে।
গ্রেপ্তারকৃত আয়েছ আলীর ভূঁইয়ার ছেলে মো. রাসেল মিয়া বলেন, শিরিন খাঁন জহিরউদ্দিনের আহম্মেদ জয়ের প্রতারনার সুযোগে শিরিন খাঁন আমাদের পরিবারকে ফাঁসাতে চাইছেন। সমস্যা সমাধানের জন্য বাড়িটি তিনি বিক্রি করতে চেয়েছেন। হান্নান সাউদ এ জমি ক্রয় করে ব্যাংকের সঙ্গে তিনি বুঝাপড়া করতে চেয়েছেন। শিরিন খাঁন ৪০ লাখ টাকা মূল্যের বাড়িসহ জমি কোটি টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। সেখানে আমার বাবাকে মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে জেল খাটানোর হুমকি দেয়। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে আমাদের জমি বসত বাড়ি বিক্রি করতে হবে। জমির ব্যবসা করতে গিয়ে ফেঁসে যেতে হলো।
সিরাজুল ইসলামের ছেলে আমিনুল ইসলাম জানান, জহিরউদ্দিন জয়ের প্রতারণার কারনে আমাদের পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছেন। পুরো ৫ কোটি টাকা না দিতে পারলে ব্যাংক ঋণের সমস্যা সমাধান হবে না। এছাড়াও শিরিন খাঁনের মামলায় আমার বাবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাদের ৫ কোটি টাকা দিয়ে সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা নেই।
শিরিন খাঁন বলেন, জমি রক্ষায় আমি মামলা দায়ের করেছি। আমি বেসিক ব্যাংক ও জহিরউদ্দিন আহম্মেদ জয়, স্ত্রী সাবরিনা আহম্মেদ সিমম্মির বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৩ জুন নারায়ণগঞ্জ অর্থ ঋণ আদালতে অর্থজারি মোকদ্দমা দায়ের করেছি। এ সমস্যা সমাধান না হওয়ায় পরবর্তীতে হান্নান সাউদের কাছে সমাধানের জন্য ধারস্থ হয়েছি। তিনিও সমাধানের জন্য গরিমসি করেন। ফলে আমার আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক তদন্ত মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ জানান, শিরিন খাঁনের মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। জমির সমস্যা সমাধান করতে হলে দু’পক্ষের মধ্যে সমাঝোতা হতে হবে।
সোনারগাঁওয়ে সাদিপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও এলাকায় বাড়ি কিনে প্রতারিত হয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে শিরিন খাঁন নামের এক নারী জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দুই সন্তানসহ শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ওই ঘটনায় শিরিন খাঁন ৪জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান সাউদ ও তার সহযোগী আয়েশ আলী গ্রেপ্তার হন। এছাড়াও ফজলুল হক ও সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া পলাতক রয়েছেন।
আপনার মতামত দিন