মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩, ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ
       

স্ত্রীকে প্রাণে বাঁচাতে শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলো না

নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁও নিউজ :
আমরা একে অপরের হাত ধরে ছিলাম। কিন্তু লঞ্চটি যখন ডুবে যায় তখন আমরা দুজন নদীতে তলিয়ে যেতে থাকি। আমি তাঁর হাত ধরে উপরে উঠিয়ে আনতে ব্যর্থ হই। একসময় সে আমার হাত ফসকে নদীতে ডুবে যায়। স্ত্রীকে প্রাণে বাঁচাতে শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলো না। এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বামী আবু তাহের।
নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যাওয়া এমএল আশরাফউদ্দিন নামের লঞ্চের যাত্রী ছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী স্কুলশিক্ষক স্ত্রী উম্মে খায়রুন ফাতেমা।শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী লঞ্চডুবিতে সোনারগাঁওয়ের  প্রধান শিক্ষিকা উম্মে খাইরুন ফাতেমা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি উপজেলার বৈদ্যরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেবি রেহেনা বিলকিস জানান, উপজেলার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে খাইরুন ফাতেমা রোববার  সকালে তাঁর স্বামীর সঙ্গে পিটিআই-এর সনদের জন্য মুন্সিগঞ্জের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে ওঠেন। কার্গো জাহাজের ধাক্কায় দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চ থেকে তিনি স্বামীর হাত ফসকে নদীতে তলিয়ে যান।  এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।  তাঁর মাহফুজুর রহমান ও আরশাদ ফাহিম তালহা নামে দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। উভয়েই মাদরাসার শিক্ষার্থী।
প্রধান শিক্ষকের স্বামী সোনারগাঁও কাজী ফজলুল হক ইউমেন্স কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক আবু তাহের জানান,ফাতেমা সোনারগাঁও উপজেলার বৈদ্যরবাজার ইউনিয়নের ৬৬ নম্বর হাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মুন্সীগঞ্জ শহরে অবস্থিত প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) থেকে সনদ সংগ্রহ করার জন্য তাঁরা দুজন রোববার দুপুরে লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ শহরে যাচ্ছিলেন। পথে কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে গেলে তিনি সাঁতার কেটে নদীর তীরে উঠে প্রাণে বাঁচলেও তাঁর স্ত্রী উম্মে খায়রুন ফাতিমা পানিতে তলিয়ে যান।
আবু তাহের আরও বলেন, লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে একে অপরের দুই হাত শক্ত করে ধরে রাখলেও একপর্যায়ে তাঁর হাত থেকে স্ত্রীর হাত ছুটে যায়। এ সময় তিনি সাঁতার কেটে তীরে ওঠেন। চোখের সামনে স্ত্রী ফাতিমা পানিতে তলিয়ে গেলেও তাঁকে বাঁচাতে কোনো সহায়তা করার সুযোগ পাননি বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তবে রাত সাড়ে ১১টায় পর্যন্ত স্ত্রীর কোনো খোঁজ পাননি তিনি। কাঁদতে কাঁদতে যেন চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তাহেরের। রাতে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন নদীপাড়ে।

আবু তাহের বলেন, আমাদের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এখন তাদের আমি কীভাবে সান্ত্বনা দেবো। ঘাতক জাহাজ যে তাদের মাকে কেড়ে নিলো। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা। সে সবসময় পর্দা করে চলাফেরা করতো। আমার সুখের সংসার ছিল।

উম্মে খায়রুন ফাতেমার বোনজামাই সোনারগাঁও উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন রোববার রাত সাড়ে ১১ বলেন, এখনো উম্মে খায়রুন ফাতিমার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। লাশ খুঁজে পেতে পরিবারের সদস্যরা নদীর তীরে অবস্থান করছেন।
তাঁদের বাড়ী উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নাকুরিয়াহাটি গ্রামে। তারা পরিবার নিয়ে সোনারগাঁও পৌরসভার হাতকোপা এলাকায় বসবাস করেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
পোস্টটি শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © Sonargaonnews 2022
Design & Developed BY N Host BD