নিজস্ব প্রতিবেদক, জামপুর :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতাসহ দুইজন পায়ে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ফেরদৌসুর রহমান মো. ডালিম নামের দুজন গুলিবিদ্ধ হন। শুক্রবার দিবাগত রাতে সোনারগাঁওয়ের জামপুর ইউনিয়নের নোয়াদ্দা বাবু বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ রূপগঞ্জে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে এ গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে গুলিবিদ্ধ ফেরদৌসের পরিবারের দাবি মামলা করায় এ গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে।
গুলিবিদ্ধ ফেরদৌসুর রহমান রূপগঞ্জের ভূলতা ইউনিয়নের মর্তুজাবাদ এলাকার মৃত জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। তিনি ভুলতা ইউনিয়ন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মো. ডালিম একই এলাকার মন্টু মিয়ার ছেলে।
গুলিবিদ্ধদের পরিবারের অভিযোগ, গুলিবিদ্ধ ফেরদৌসুর রহমান প্রায় ৪ মাস আগে রূপগঞ্জের মাছিমপুর এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে শওকত আলী ওরফে শ্যুটার রিয়াজের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করে। মামলা করার জেরে শুক্রবার রাতে শওকত আলী ওরফে শ্যুটার রিয়াজ ও তার বড় ভাই মোহাম্মদ আলী ৭-৮ জন অনুসারীদের নিয়ে ফেরদৌসুর রহমানকে তুলে এনে পায়ে গুলি করে। এসময় ফেরদৌসুর রহমানকে বাঁচাতে গিয়ে ডালিম হাতে গুলিবিদ্ধ হন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া তাদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ফেরদৌসুর রহমানের দুই পায়ে ও ডালিমের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও ডালিমের পিঠে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দুজনেরই ঢামেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রূপগঞ্জের বাসিন্দা ফেরদৌসুর রহমান ও ডালিম নামের দুই ব্যাক্তি জামপুর ইউনিয়নের নোয়াদ্দা বাবুর বাজার এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এসময় মোটরসাইকেল যোগে ৭-৮ জন এসে তাদের সঙ্গে তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ফেরদৌসুর রহমান নামের একজনকে বাজারের পাশে জেরপূর্বক টেনে হেচড়ে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে তাকে গুলি করে। ফেরদৌসের পাশে থাকে ডালিম তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকে গুলি করে। ওই গুলি তার হাতে লাগে। পরবর্তীতে জানা যায় রূপগগঞ্জ থেকে শওকত আলী ওরফে শ্যুটার রিয়াজ ও তার ভাই মোহাম্মদ আলী ফেরদৌসকে গুলি করে। এসময় শওকত আলীর অনুসারীরা এসে ডালিমের পিঠে ছুড়িকাঘাত করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে গুলিবিদ্ধদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রূপগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, শওকত আলী ওরফে শ্যুটার রিয়াজ ও মোহাম্মদ আলী রূপগঞ্জের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। মাদক ব্যবসা, জমি দখল ও হত্যাসহ নানা অপরাধ করে থাকেন। রূপগঞ্জের পাশ্ববর্তী জামপুর ইউনিয়নে তাদের অবাধ বিচরণ। রিয়াজ বাহিনী ওই এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অস্ত্র চালানোয় পারদর্শীতার কারনে শওকত আলীকে শ্যুটার রিয়াজ নামে চেনেন। তাদের ভাইয়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
ফেরদৌসের বড় ভাই হানিফ মিয়া বলেন, সোনারগাঁওয়ের পেরাবো বাজারে ফেরদৌসুর একটি মুদি দোকান ছিল। প্রায় চার মাস আগে ওই দোকানে চাঁদা তুলতে গিয়ে শওকত আলী ওরফে রিয়াজ অনুসারীদের সঙ্গে ফেরদৌসুর রহমানের তর্কবিতর্ক হয়। এর জেরেই শওকত আলী ফেরদৌসুর রহমানের বাড়িঘরে গুলি চালিয়ে বাড়িঘর লুটপাট করে। এঘটনায় ফেরদৌসুর রহমান বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা তুলে নিতেই শুক্রবার রাতে রিয়াজ ফেরদৌসুর রহমানকে তুলে নিয়ে গুলি করে। এঘটনায় গতকাল শনিবার সোনারগাঁও থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন,ফেরদৌসুর রহমানের পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। রাতে আরেকটি পায়ে অস্ত্রোপচার হবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সে এখন শঙ্কামুক্ত। তবে ডালিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ রাতে তার অস্ত্রোপচারের কথা রয়েছে।
অভিযুক্ত শওকত আলী ওরফে শুট্যার রিয়াজকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তার ভাই মোহাম্মদ আলী ফোন রিসিভ করেনি। তাকে ক্ষুদে বার্তা দিয়েও সাড়া মেলেনি।
সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, রূপগঞ্জের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলি ছোঁড়া হয়েছে এমন খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কাউকে পায়নি। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগও করেননি। দুই পক্ষকে শনাক্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত দিন