নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁও নিউজ :
টানা ৪ দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে পরাজিত হলেন সন্ত্রাসী হামলার শিকার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার হাবিবপুর গ্রামের ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া (৫০)। গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। নিহত ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের মৃত শাহজাহান ওরফে ডেঙ্গর আলীর ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের ব্যবসায়ী ফজল মিয়াকে গত মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় বাড়ি মজলিশ গ্রামের মৃত মজিব প্রধানের ছেলে জামান প্রধান ব্যবসায়ীক কাজের কথা বলে স্থানীয় মৃত হাশেম প্রধানের ছেলে রাজ্জাকের বাড়ীতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে পঞ্চায়েত কমিটির উপস্থিতিতে ৮৫ পয়েন্ট একটি জায়গা-জমি নিয়ে বিচার শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক চলাকালীন সময়ে ফজল মিয়ার সাথে রাজ্জাক মিয়ার তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফজল মিয়ার ভাই ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে সেখানে রাজ্জাক গ্রুপের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের ৫ জন আহত হয়। এসময় রাজ্জাক মিয়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ী ফজল মিয়ার ছোট ভাই দুলাল মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে নাড়িভুড়ি বের করে ফেলে। গুরুতর আহত অবস্থায় দুলাল মিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘন্টা অপারেশন শেষে দুলাল মিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউতে) রাখা হয়। টানা ৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে দুলাল মিয়া সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
নিহত দুলাল মিয়ার ভাতিজা ইয়াছিন হোসাইন নির্ঝর জানান, তার চাচা দুলাল মিয়াকে ধারালো ছুরি দিয়ে সন্ত্রাসী রাজ্জাক পেটে আঘাত করে নাড়িভুড়ি বের করে ফেলে। এসময় সে তার চাচাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তার বাম হাতের কজ্বি কেঁটে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় তার ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে আসলে হামলাকারীরা খুন ও জখমের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী আমার চাচা দুলাল মিয়াকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে প্রেরণ করে। দীর্ঘ ৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে গত শুক্রবার মধ্য রাতে তার চাচা দুলাল মিয়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে।
এদিকে এই ঘটনার আগে গত মঙ্গলবার রাতে দুলাল মিয়ার ভাতিজা ইয়াছিন হোসাইন নির্ঝর বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় রাজ্জাক, মেহেদি, মহসীন, ইমদাদ হোসেন, জামান, শামীম, সজিব, শাহ আলমসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামী করে সোনারগাঁও থানায় একটি মারধর ও ছুরিকাঘাতের মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ওই দিনই সোনারগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ ইমরান হোসেন মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার আসামী ইমদাদ হোসেন (৫৫) ও সন্দেহজনক আসামী আরমান মিয়াকে (৪৩) গ্রেফতার করে।
এদিকে শনিবার বিকেলে নিহত দুলাল মিয়ার লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলার হাবিবপুর গ্রামে নিয়ে আসা হলে সেখানে এক হৃদয় বিধায়ক ঘটনার অবতারণ ঘটে। নিহতের স্বজনদের কান্নায় এলাকার আসপাশের বাতাস ভারি হয়ে উঠে। বিকেলে জানাযার নামাজ শেষে নিহত দুলাল মিয়ার লাশ স্থানীয় হাবিবপুর কবর স্থানে দাফন করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনারগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ ইমরান হোসেন জানান, হামলায় আহত দুলাল মিয়া যেহেতু টানা ৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আইসিইউতে মৃত্যু বরণ করেছেন সেহেতু মারধর ও ছুরিকাঘাতের মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরিত হবে।
সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাহাবুব আলম জানান, হামলার ঘটনায় যেহেতু দুলাল মিয়া নামক একজন নিহত হয়েছে সেহেতু মারধর ও ছুরিকাঘাতের মামলাটি এখন থানায় হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হবে। মামলার আসামীদের গ্রেফতার করতে ইতিমধ্যে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করেছে।
আপনার মতামত দিন