নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁও নিউজ :

সোনারগাঁওয়ো পুলিশ নির্যাতনে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের মৃত্যু অভিযোগে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কারো বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ নেই বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের মেয়ে শিল্পী আক্তার। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নিহত নুরুল ইসলাম একজন পেশাদার মাদক কারবারী। নুরুল ইসলামের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন হয়।

তবে এ ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় নিহতের জামাতা মো. জাহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।

নুরুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাড়িতে যাওয়া তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা।

নিহত নুরুল ইসলামের মেয়ে শিল্পী আক্তার ও মিথিলা মঙ্গলবার বিকেলে জানান, তাদের বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে তাদের কোন প্রকার অভিযোগ নেই। এক পর্যায়ে ওই বাড়ি থেকে চলে আসার অনুরোধ করেন। কথা বলার এক পর্যায়ে তারা জানিয়েছেন রাতেই এ বিষয়টি মিমাংসা হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।

এলাকাবাসী জানান, নিহত নুরুল ইসলাম এক সময় পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ছিলেন। নুরুল ইসলামের বাড়িতে সোমবার দুপুরে পুলিশ আসার পর তার ছোট ভাই শামসুল আলম ও প্রতিবেশী ইমরানসহ কয়েকজন গিয়েছিলেন। নুরুল ইসলাম এক সময় মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিন বছর আগে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হওয়ার পর কিছুটা এ ব্যবসা থেকে সড়ে আসলেও পুরোপুরি এ ব্যবসা ছাড়তে পারেননি। পুলিশের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল। তবে তালতলা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা নিয়মিত তার বাড়িতে আসতেন। সোমবার দুপুরে ২টার দিকে তালতলা ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইলিয়াস আহমেদ, কনস্টেবল আবুল কালাম ও রুকনুজ্জামান সাদা পোশাকে নুরুল ইসলামের বাড়িতে আসেন। তার কিছু সময় পর নুরুল ইসলামের বাড়িতে চিৎকার চেচামেচি শোনা যায়। পরে গ্রামবাসী তার বাড়িতে যান।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, নুরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের কাছে পুলিশ এক লাখ টাকা চেয়েছে। টাকা না দিলে চলমান রাজনৈতিক মামলায় নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখায়। তার বউ তখন প্রথমে ১০ হাজার, পরে আরো ৯ হাজার টাকা দেয়। টাকা নিয়া পুলিশ নুরুল ইাসলামের হাতের হাতকড়া খুলে দিয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পুলিশ যাওয়ার পর দেখি নুরুল ইসলাম ঘরে খাটের মধ্যে পড়ে আছে। তার দুই মেয়ে অচেতন অবস্থায় ডাকতে গিয় দেখে সে আর কথা বলে না। এর পর আড়াইহাজার হাসপাতালে নিয়া গেলে ডাক্তার তাকে মারা গেছে বলে জানিয়েছেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে পুলিশের সঙ্গে নুরুল ইসলামের ধ্বস্তাধন্তি হয়। এ ঘটনার পর বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও স্বজনরা একটি ঘরে তিন পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে দীর্ঘ ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন ও সোনারগাঁ থানার ওসি মাহাবুব আলম তাদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেন।

রাত সাড়ে আটটার দিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা ঘটনাস্থলে যান। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে প্রায় আধা ঘন্টার মতো বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সংসদ সদস্য উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে বলেন, নুরুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে তার পরিবারের কোন আপত্তি নেই। তারা থানায় কোন প্রকার মামলা করবেস না। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাকে দাফন করা হবে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা নুরুল ইসলামের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। সংসদ সদস্যের বক্তব্যের পর এলাকার লোকজন ওই বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্যে লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ক্ষুদে বার্তা দিয়ে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ) চাইলাউ মারমা সোনারগাঁও নিউজকো জানান, নুরুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাড়িতে যাওয়া তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় নানা ধরনের অভিযোগ উঠার কারনে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগগুলো গুৃরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।