শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁও নিউজ :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি বেসরকারী ক্লিনিকের ভেতর জহিরুল ইসলাম (৩৭) নামের এক ফার্মেসী কমকর্তার রহস্যজনক মৃত্যুর এক মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্যে উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। গত ২২ ফেব্রুয়ারী সকালে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় সোনারগাঁও নতুন সেবা জেনারেল হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য লাশ নারায়ণগঞ্জ জেলা মর্গে প্রেরণ করে। মৃত্যুর ৩৫ দিন পেরিয়ে গেলেও ভিসেরা রির্পোটের পুলিশের দোহায়ে তদন্তের ধীরগতির অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় পুলিশের হাতে সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ পুলিশের হাতে রয়েছে। পুলিশ রহস্যজনক ভাবে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে নিহতের পরিবারকে জানাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন। পরিবারের অভিযোগ পুলিশের হাতে হাসপাতালের সকল সিসি টিভির ফুটেজ তাদের কাছে রয়েছে। সিসি টিভি ফুটেজ ২১ ফেব্রুয়ারী রাত ১০ থেকে পরদিন ১০টা পর্যন্ত পর্যালোচনা করলেই এ মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব। কি কারনে পুলিশ এ তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কোন কথা বলছেন না এটা আরেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
নিহত জহিরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে পিরোজপুর ইউনিয়নের কান্দারগাঁও এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ৫জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে। দীর্ঘ এক মাস জেল হাজতে থাকার পর এ মামলার প্রধান আসামী সোনারগাঁও নতুন সেবা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মনিরুল ইসলামকে গত ২২মার্চ আদালত অসুস্থ্যতার জন্য বাদির জিম্মায় জামিন দেয়।
স্ত্রী তাহিরা শবনম জুবাইদা সোনারগাঁও নিউজকে জানান, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশের গাফলতি দেখছেন তিনি। এক মাস পেরিয়ে গেলেও এ মামলার রহস্য বের করতে পারেনি পুলিশ।
তিনি আরো জানান, এ হত্যাকান্ডের সিসি টিভি ফুটের পুরোপুরি পর্যালোচনা করলেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে। পুলিশ তাকে জানিয়েছেন সিসি টিভি ফুটেজ রাত তিনটার পর পুলিশের কাছে আর নেই। তার দাবি রাত তিনটার পর এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ হাসপাতাল থেকে সিসি টিভির ফুটেজ হার্ডডিক্সসহ থানায় নিয়ে গেলেও কেন পরদিন লাশ উদ্ধার পর্যন্ত নেই। সেই সময়ের ফুটেজ কোথায় গেল?
তবে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা মো.ইমরান হোসেনে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকল ফুটেজ তাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে হত্যা কোন স্পষ্ট কোন কিছুই পাওয়া যায়নি। তিনি ভিসেরা রিপোর্ট হাতে না পেলে হত্যাকান্ডের বিষয়ে কোন কিছুই বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন।
নিহতের স্ত্রীর দাবি, জহিরুল ইসলাম হত্যাকান্ডের পর একটি ব্যক্তিগত ফাইল কেবিনেটের চাবি পাওয়া যাচ্ছে না। সেই চাবির লকারে তার অনেক প্রয়োজনীয় গোপনীয় কাগজপত্র ছিল।
তিনি জানান, জহির হত্যাকান্ডের পর সে ড্রাগ নিতো এমন প্রপাকান্ড ছাড়ানো হচ্ছে। এ হত্যাকান্ড ভিন্ন খাতে দেওয়ার জন্য এমন কথা ছড়ানো হচ্ছে। সে যদি ড্রাগ নিতো তাহলে এ হাসপাতালের সকল ঔষধের লেনদেন সে নিজে করতো। নেশাগ্রস্থ হলে ১২ বছর ধরে তিনি এ হাসপাতালের ইনচার্জের পদে থাকতে পারতেন না। ড্রাগ নিলে তার এতোগুলো সিরেঞ্জের আঘাত থাকতো না।
নিহতের মা জোসনা বেগম সোনারগাঁও নিউজকে বলেন, এ হত্যাকান্ডের বিচার আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিয়েছি। আমার এক ছেলেকে হারিয়েছি। আরেক ছেলেকে হারাতে চাই না। এ এলাকায় অনেক মার্ডার হয়েছে। কেউ এখনো বিচার পায়নি। পুলিশ কিভাবে বিচার পাইয়ে দিবে ?। এক মাস পার হয়ে গেলো এখনো আমার ছেলেকে কে মারলো কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, হত্যাকান্ডের দিন রাত তিনটার দিকে নিহত জহিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত একটি মোবাইল ফোনে কোন একটি নাম্বারে ভয়েস ম্যাসেস পাঠানো হয় ড্রাগ নিচ্ছি। এতেই কি প্রমাণিত হয় না জহির হত্যার পর হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া কোন ব্যক্তি বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য এ ভয়েস ম্যাসেস দিয়েছে। পরববর্তীতে নিহতের ছোট ভাই কামরুল ইসলামকে এ কন্ঠটি জহিরুল ইসলামের কিনা জানতে তাকে থানায় ডেকে আনেন। সেই ভয়েসটি জহিরুলের না বলে দাবি করেন কামরুল ইসলাম।
এদিকে পুলিশের হাতে তদন্তে এগিয়ে নেওয়ার মতো অনেক ক্লু থাকলেও পুলিশ কেন হত্যাকারী চিহ্নিত করার বিষয়ে গড়িমসি করছে এমন প্রশ্ন নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনারগাঁও থানার এসআই মো. ইমরান হোসেন সোনারগাঁও নিউজকে জানান, ময়না তদন্ত ও ভিসেরা রির্পোট না আসা পর্যন্ত এ মামলা অগ্রগতি করা যাচ্ছে না। রাত তিন টার পর ফুটেজ গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেণ, সকল ফুটেজ আমারদের কাছে সংরক্ষিত আছে। তবে ফুটেজ গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। ভিসেরা রির্পোট হাতে পেলেই জহিরের বিষয়টি মৃত্যু না অন্য কিছু তা জানা সম্ভব হবে।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ- অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন সোনারগাঁও নিউজকে জানান, জহিরুল হত্যাকান্ডের তদন্ত চলছে। সিসি ফুটেজ গুলো প্রতিনিয়তই পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আশা করি শীঘ্রই এ ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন হবে।
আপনার মতামত দিন