শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০৯:৫৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁও নিউজ :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি কোম্পানির আগ্রাাসনে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী ঐতিহ্যবাহী বৈদ্যেরবাজার লঞ্চঘাট এলাকায় অবস্থিত মাস ফিড নামের ওই কোম্পানির আগ্রাসনের কারনে ওই এলাকার অসহায় হয়ে পড়েছে ওই এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। পশু খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত বর্জ্যের গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে তারা। তাদের এখন কঠিন দিনযাপন করতে হচ্ছে। কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ওই এলাকার জনগন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের বৈদ্যেরবাজার লঞ্চঘাট এলাকায় গত দু’মাস ধরে মাস ফিড কোম্পানি ওই এলাকার রামগঞ্জ ও সাতভাইয়াপাড়া গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের চলাচলের দুটি রাস্তা সরু করে চলাচলে অনুপযোগী করে রেখেছে। এছাড়াও কোম্পানিটি ওই সকল পরিবারের লোকজনকে জায়গা জমি বিক্রি করে অন্যত্র ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। কোম্পানির নির্মাণকাজের ব্যবহৃত বালুসহ বিভিন্ন সামগ্রী পাশ্ববর্তী বাড়িতে রেখে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগীরা। পশু খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত বর্জ্যের গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে এলাকার জনগন। সকলকেই নাক চেপে ধরে চলতে হয়। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সকল বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান আল আমিন সরকারকে বিষয়টি দেখবালের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানান। তারা অন্য কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানা যায়, উপজেলার বৈদ্যোরবাজার এলাকায় পশু খাদ্য উৎপাদনের জন্য মাস ফিড নামের কোম্পানি গড়ে উঠার পর কোম্পানি তাদের নিজস্ব জমি ছাড়াও পাশ্ববর্তী বিভিন্ন লোকের বাড়ির জায়গা দখল করে কোম্পানির নির্মাণ কাজ করছেন। কেউ বাধা দিলেই ওই পরিবারকে চলাচলের রাস্তা সংকোচিত করে সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়াও কোম্পানির নিজস্ব দালালদের মাধ্যমে হুমকি ধামকি দিয়ে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর।
তাদের অভিযোগ, এই কোম্পানির আশপাশে প্রায় ২ শতাধিক পরিবার এখনো বসবাস করে। এ পরিবারগুলোকে দালালদের মাধ্যমে হুমকি দিয়ে জমি বিক্রিতে বাধ্য করছে। এছাড়াও চলাচলের রাস্তা সংকোচিত করে রেখেছে। যে রাস্তা দিয়ে মৃত কোন লাশও বের করা সম্ভব না।
বৈদ্যোরবাজার রামগঞ্জ গ্রামের গৃহবধু আরতী রানী দাস বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আমরা নদীতে চলাচলের জন্য সহজেই যাতায়ত করতাম। কিন্তু এ কোম্পানি গত কয়েক মাস ধরে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে রাস্তা ছোট করে রেখেছে। নদীতে যাওয়ার মতো কোন উপায় নাই। অন্যের বাড়ি হয়ে নদীতে দৈনন্দিন কাজ করার জন্য যেতে হচ্ছে। এছাড়াও নদীর ঘাটে আমাদের নৌকা রাখতে বাধা দিচ্ছে। কোম্পানির লোকজন এসে বাড়িঘর বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য বাধ্য করছে।
সাতভাইয়াপাড়া গ্রামে গৃহবধু মাসুদা বেগম বলেন, কোম্পানি আমার বাড়ির সীমানা ঘেঁষে প্রায় ১শ ফুৃট গভীর করে হাউজ নির্মাণ করছে। ফলে আমার বসত ঘর ভেঙ্গে গেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চাইতে গেলে কোম্পানির লোকজন হুমকি দিয়ে জমি বিক্রি করে দিতে বলছেন।
সাতভাইয়াপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, মাস ফিড নামের কোম্পানি আমাদের বাড়িতে যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এমনভাবে বালু স্তুপ করে রেখেছে। গত কয়েকদিন আগে একটু বৃষ্টিতেই বাড়িঘরে পানি জমে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয়েছে। ভরা মৌসুমে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারিনা, পানির জলাবদ্ধতায় ময়লা আবর্জনা জমে পরিবেশ দুষিত হয়ে যায়।
মাস ফিডের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন সোনারগাঁও নিউজকে জানান, এ বিষয়ে আমরা কোন কথা বলতে পারবো না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার সকল দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন।
বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার সোনারগাঁও নিউজকে জানান, এলাকাবাসীর অনুরোধে কোম্পানিতে গিয়ে ঘর ভাঙ্গা ও কয়েকটি ঘর ডেবে যাওয়ার সত্যতা পেয়েছি। কোম্পানি ও এলাকার লোকজনের সামনে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তবে রাস্তা সংকোচিত করার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি বলে তিনি জানান।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ এলাহী সোনারগাঁও নিউজকে জানান, এলাকাবাসীকে ক্ষতি করে যে কোন কোম্পানি কাজ করতে পারে না। কেউ এ বিষয় আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে নি। আমরা বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
আপনার মতামত দিন