নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁও নিউজ :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন গণধর্ষণের শিকার এক গৃহবধু। তার দাবি সোনারগাঁওয়ের নোয়াইল এলাকার একটি মার্বেল কারখানা মালিকের কাছে পাওনা টাকার দ্বন্ধে থাকায় আদালতে মামলা দেওয়ার কারণে গত মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে তাকে অপহরণ করে অচেতন করে তাকে গর্ণধষণ করা হয়েছে। গৃহবধুকে পূর্ব সনমান্দি চকের একটি ভূট্টা ক্ষেত থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে তাকে সোনারগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার জানিয়েছেন গণধর্ষণের আলামত তার মধ্যে রয়েছে। ওই গৃহবধুকে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হবে। বিবরণী কাগজপত্র তৈরি করে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধু সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে শুয়ে থাকা থেকে উঠার চেষ্টা করে পারেননি। তিনি জানিয়েছেন, সোনারগাঁও পৌরসভার দুলালপুর নোয়াইল গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে লিটনের মার্বেল কারখানায় সে চাকুরি করেন। লিটনের কাছে ভূক্তভোগী গৃহবধু বেতন ও ধার দেওয়া বাবদ ২লাখ ৮০ হাজার টাকা পান। পাওনা টাকা ও তাকে ধর্ষণ করছে এমন অভিযোগ তুলে আদালতে ওই গৃহবধু লিটনের আাদলতে মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে গত মঙ্গলবার সকালে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই সময়ে সে চাকুরি ছেড়ে দেন। চাকুরি ছেড়ে দিয়ে তিনি বেলা ১২টার দিকে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা যাওয়ার সময় আদমপুর বাজার থেকে একটি রিক্সায় উঠেন। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সামনে থেকে একটি অপরিচিত মহিলা তার সঙ্গে সেই রিক্সায় উঠেন। কিছুক্ষণ কথা বলার এক পর্যায়ে তাকে কিছু একটা মুখের সামনে নেওয়ার পর সে অচেতন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে পরদিন বুধবার বেলা ১২টার দিকে বৃষ্টির পানি শরীরে লাগার পর তিনি ভূট্টা ক্ষেতে তাকে দেখতে পান। তিনি সেখান থেকে উঠে দাড়াতে চাইলে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি কান্না করতে থাকেন। সেখানে পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারী জুয়েল মিয়া ও সনমান্দি গ্রামের লিপি বেগম কান্নার শব্দ শুনে সেখানে যান। ভূট্টা ক্ষেত থেকে এলোমেলো অবস্থায় কাপড় চোপর ছেড়া অবস্থায় গৃহবধুকে উদ্ধার করে লিপি বেগমের বাড়িতে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে গৃহবধুর মুখ ঘটনা শুনে তিনি তার ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তার বাড়ির লোকজন তাকে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
তিনি বলেন, তার কারখানায় আমাকে এর আগে শরবতের সঙ্গে নেশাজাতীয় ঔষধ খাইয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এনিয়ে আমি আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আদালত থেকে তার কাছে নোটিশ আসার পর সে মিমাংসার জন্য অস্থির হয়ে উঠে। আমাকে সে ওই মহিলার মাধ্যমে উঠিয়ে নিয়ে হাত পা বেঁধে ধর্ষণ করে ভূট্টা ক্ষেতে মৃত ভেবে ফেলে আসে। আমাকে হাত পা বাঁধার রশিগুলো লিটন ঢাকা থেকে মাল বেঁধে আনার রশি। এতে প্রমাণ হয় লিটন আমাকে লোকজন নিয়ে হাত পা বেধেঁ অচেতন করে ধর্ষণ করেছে।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে ভুট্টা ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, গৃহবধুর ব্যবহৃত মুখের স্কাপটি পড়ে রয়েছে। তাছাড়া পাশে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম ফুয়েল কাগজ ও বোতলের লাল রঙের ক্যাপ পড়ে রয়েছে।
ভূক্তভোগী গৃহবধু আরো বলেন, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত লিটন ছাপেরবন্ধ গ্রামের মনির হোসেনের মাধ্যমে তার ছেলে মেয়েদের হুমকি দেন। মনিরের হুমকিতে তটস্ত তার পরিবার। লিটন তার পরিবারের ক্ষতি করতে এমনও বলেন। তাদের হুমকির কারণে তার ছোট ছেলে ছাড়া কেউ তার পাশে নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার মতো কেউ নেই। খবর পেয়ে থানা থেকে একজন পুলিশ এসেছিল। আমি এখনো কোন অভিযোগ দেইনি। কি কারণে আমার স্বাক্ষর নিয়েছে জানি না।
ভূক্তভোগী গৃহবধুর ছোট ছেলে মারুফ মিয়া সোনারগাঁও নিউজকে জানায়, তার মা চৌরাস্তা যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিল। পরদিন দুপুরে তার মাকে আহত অবস্থায় এক মহিলা বাড়িতে দিয়ে যায়। তার মাকে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে অচেতন করে চকের একটি ভূট্টা ক্ষেতে ফেলে রাখে। তার মাকে নির্যাতনের বিচার দাবি করে সে।
গৃহবধুকে ভূট্টা ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা লিপি বেগম সোনারগাঁও নিউজকে জানান, হাঁসের জন্য শামুক কুড়াতে গিয়ে তিনি ও জুয়েল নামের এক পরশী ভাই ওই গৃহবধুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। তারা দুজনই তাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে দিয়ে আসেন। উদ্ধার হওয়ার সময় গৃহবধুর জামা কাপড় ছেড়ে ও এলোমেলো ছিল বলে জানিয়েছেন লিপি বেগম।
সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. মোশারফ হোসেন সিজান সোনারগাঁও নিউজকে
বলেন, গৃহবধুর বিবরণীতে তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন বলে জানিয়েছে। তবে তার শরীরের নিন্মাংশ ও গোপন স্থানে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হচ্ছে বলে জানান। তবে বিবরণ অনুয়ায়ী তিনি গণ ধর্ষণের শিকার হতে পারেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে তাকে পাঠানো হবে। বিবরণী অনুয়ায়ী কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত লিটন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। একাধিকবার চেষ্টার পর তাকে ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক তদন্ত মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ সোনারগাঁও নিউজকে বলেন, মারামারি হয়েছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে গণ ধর্ষণের বিষয়ে কোন অভিযোগ দেয়নি। এর আগে গৃহবধু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করেছেন।
আপনার মতামত দিন