শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ
       
শিরোনাম :
সোনারগাঁয়ের জনগনের ভালোবাসা নিয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকতে চাই –সাবেক সাংসদ খোকা সোনারগাঁওয়ে করোনা যোদ্ধাকে নিয়ে অপপ্রচার ও  হত্যার চেষ্টার অভিযোগ, দোষীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন  সোনারগাঁওয়ে বাড়ির মালিক ও তার ছেলেকে পিটিয়ে জখম, ভাড়াটিয়া শ্লীলতাহানি সোনারগাঁওয়ে লোক প্রযুক্তি ও পালকির গান শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত সোনারগাঁওয়ে তিনদিন ব্যাপী বউ মেলা চলছে সোনারগাঁওয়ে যাদুঘরে পক্ষকাল ব্যাপী বৈশাখি মেলা শুরু কাঁচপুরে কলেজ শিক্ষার্থী ছিনতাইকারী কবলে,  মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনতাই বারদী সমাজ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে ৬শ’ পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ সনমান্দিতে আড়াই হাজার শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ  জামপুরে মাতৃভূমি সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যাগে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ

সংস্কৃতির আসল রূপ ধরে রাখতে হবে–ওবায়দুল কাদের

হাসান মাহমুদ রিপন :
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংস্কৃতির আসল রূপ ধরে রাখতে হবে। বিল্ডিং করে কোন লাভ নেই। বাঁশ দিয়ে আপনারা যে সেতু তৈরি করেছেন সেটাই এখানকার ঐতিহ্য। এটাকে বহাল রাখতে হবে। এটার আদি রূপটাকে সঠিক জায়গায় রাখতে হবে। এখানে এসে ইট পাথর বড় বড় বিল্ডিং দেখবো  সেটা ঠিক নয়। এখানে কাঁচা রাস্তাই মানায়।
তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের আদলে স্মার্ট জাদুঘর বানাবো না। আমি একটি ভুল করেছি। আমি কুষ্টিয়ায় লালন শাহকে ইট পাথরের খাঁচায় বন্দি করেছি। এখন সেখানে গেলে আফসোস হয়। কেন করলাম? তখন যারা বিরোধিতা করেছিল তারা ঠিক ছিল। কারন লালনকে ইট পাথরের খাঁচায় মানায় না। সেই বড় বড় গাছ কেটে  ফেলা হয়েছে বিল্ডিং বানাতে গিয়ে। সংস্কৃতিকে ইট পাথরে বন্দি করবেন না।

বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, আজ বাঙালিয়ানার বিশ্বস্ত ঠিকানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই আমাদের আসল ঠিকানা৷ আজ সময় এসেছে তার হাতকে শক্তিশালী করার। অপশক্তিকে প্রতিহত করতে আজ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের দেশ গভীর ষড়যন্ত্রের মুখে। এ দেশ আবারও সাম্প্রদায়িকতার ছোবলে আক্রান্ত, জঙ্গিবাদের যারা এদেশে সূচনা করেছে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আবারও হিং¯্র থাবা দৃশ্যমান। এখানে রাজনীতির পাশাপাশি সংস্কৃতির দায়িত্ব আছে। এ শত্রæ আমাদের অভিন্ন শত্রæ। ওরা স্বাধীনতার দুশমন, মুক্তিযুদ্ধের দুশমন। এদের হৃদয়ে বাংলাদেশ নেই।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, নেত্রকোণা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক এসএম রেজাউল করিম, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ্-আল-কায়সার,নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল প্রমুখ।

মন্ত্রী বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, এ দেশে কারো সহিংস আন্দোলনের জন্য সাধারণ মানুষের মালামালের ক্ষতি হলে এর জন্য আমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। বিএনপি উস্কানি দিচ্ছে সহিংসতা ও ভাংচুর করার। প্রতিনিয়ত তারা পুলিশের উপর হামলা করছে। তার সমুচিত জবাব আমাদের দিতেই হবে। তারা উন্মুক্ত রাজপথ পেয়ে যা খুশি তা করছে। কিছুদিন আগে কাঁচপুরে ছয় লেনের ভিত্তি প্রস্থর রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের উন্নয়ন দেখে তাদের মনে অন্তরজ্বালার সৃষ্টি হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী একদিনে ১০০ ব্রীজ উদ্বোধন করেন। পরশুদিন নরসিংদীর ব্রীজের উদ্বোধনী ফলক পুড়িয়ে দিয়েছে একটি মহল। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দালন করতে আগ্রহী নয়। তাদের মধ্যে শুধু খাই খাই ভাব। তারা ভোটে হেরে যাবে তাই এমন করছে। অসুস্থ  রাজনীতি করতে করতে মির্জা ফখরুলরা আজ অসুস্থ হয়ে গেছে। আমরা দেশে কোনো অশান্তি চাই না। প্রতিদিনই আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। যারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা করবে তার সমুচিত জবাব দিতে হবে। এখানে কোনো আপোস নেই৷ আমরা কোনো উস্কানি দিবো না। এইসব উস্কানি বন্ধ করতে আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। তারা এইসব কর্মকান্ড করবে আমরা চুপ করে কি ললিপপ খাবো? তার সমুচিত জবাব আমরা দিবো।

তিনি আরো বলেন, পানাম সিটির মনোরম দৃশ্যপট সবাইকে মুগ্ধ করে। সোনারগাঁয়ের এসব বিষয়গুলোর দিকে কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো নজর দিলে জাতির পিতা শেখ মজিবুর রহমান ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন যে লক্ষ্যে এ  লোকশিল্প ফাউন্ডেশন করেছিলেন তা স্বার্থক হবে। আজকের যে সমাবেশ তা সাংস্কৃতিক সমাবেশ। আপনারা সব জায়গায় রাজনীতি টেনে আনবেন না। এ সোনারগাঁ সংস্কৃতির আমানত। আমাদের এসব সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৯৯৬ সালে এ জাদুঘরের উদ্বোধনে এসেছিলাম৷ এখানকার বিখ্যাত জামদানি। এদের আরও উৎসাহ দেয়া দরকার। আন্তর্জাতিক ভাবে এ শিল্প ও এখানকার পন্য সামগ্রী তুলে ধরতে হবে। এখানকার পন্য আমাদের জন্য লাভজনক। এ বিষয়গুলো নজর দিলে আমাদের এ ফাউন্ডেশনের যাত্রা সূচনা করেছিলেন সেটা স্বার্থক হবে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন এ লোকজ ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু নিজ উদ্যোগে এখানে জায়গা বরাদ্দ করে  দেন। এক সময় এ জায়গায় এমন বড় অট্টালিকা ছিলো না, কোনো লাইব্রেরি ছিল না। বর্তমান সরকার লোক শিল্প জাদুঘরের ব্যাপক উন্নয়নের কাজ করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক মেলা উদ্বোধন করেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সকল অতিথিরা। পরে মেলার বিভিন্ন দেশীয় কারু পণ্যের স্টল ঘুরে দেখেন এবং দোকানিদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।

মেলায় কর্মরত রাজশাহীর মৃৎশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল বলেন, প্রতি বছর মেলায় অংশ নিয়ে থাকি। এ মেলায় শখের হাড়ির কদর বেশি। মেলা থেকে অনেকেই এ ঐহিত্য সাজিয়ে রাখার জন্য এগুলো কিনে নিয়ে থাকেন।

রংপুরের শতরঞ্জী শিল্পী শিউলী আক্তার বলেন, ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে আমরা প্রতিবছর মাস ব্যাপী এ মেলায় অংশ নিয়ে থাকি। টাকা আয়ের পাশাপাশি আমাদের ঐহিত্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পেরে আনন্দিত হই। এখানে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সেরা পুরস্কারের ব্যবস্থা করে উৎসাহ যোগায়।

সোনারগাঁওয়ে বেত শিল্পী পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, ঐহিত্য লালন করাই লোক ও কারুশিল্প মেলার উদ্দেশ্য। এখানে আসলের দেশের বিভিন্ন স্থানের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে এক সঙ্গে পাওয়া যায়।

মেলায় দেশীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে আয়োজিত মাসব্যাপী এ লোক কারুশিল্প মেলায় কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনী, লোকজ প্রদর্শনী, পুতুল নাচ, বাইস্কোপ, নাগরদোলা, গ্রামীণ খেলাসহ বাহারী পণ্য সামগ্রীর প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। মাসব্যাপী উৎসবে প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কুলের ছেলে মেয়েদের পরিবেশনায় বিলুপ্ত প্রায় গ্রামীণখেলা, পুতুল নাচ, কর্মরত কারুশিল্পীর করুপন্যের প্রদর্শনীসহ নানা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

ফাউন্ডেশন সূত্র জানান, এবারের মেলায় কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ২৪টি স্টলসহ ১০০টি স্টাল বরাদ্ধ করা হয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রথিতদশা ৪৮ জন কারুশিল্পী সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। এ বছর সোনারগাঁয়ের দারুশিল্পের কারুকাজ, হাতি ঘোড়া, মমী পুতুলের বর্ণালী-বাহারি পণ্য, জামালপুরের তামা-কাঁসা-পিতলের শৌখিন সামগ্রী, সোনারগাঁয়ের বাহারি জামদানি শিল্প, বগুড়ার লোকজ বাদ্যযন্ত্র, কক্সবাজারের শাঁখা ঝিনুক শিল্প, ঢাকার কাগজের শিল্প, রাজশাহীর মৃৎশিল্প -মাটির চায়ের কাপ, শখের হাঁড়ি, বাটিক শিল্প, খাদিশিল্প, মণিপুরী তাঁতশিল্প, রংপুরের শতরঞ্জি শিল্প, টাঙ্গাইলের বাঁশ- বেতের কারুপণ্য, সিলেটের বেতশিল্প, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুজনি কাঁথা, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা পুতুল, খাগড়াছড়ি ও মৌলভীবাজারের ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারুপণ্য, মৌলভীবাজারের  বেতের কারুশিল্প, ঠাকুরগাঁয়ের বাশেঁর কারুশিল্প, মাগুড়া ও ঝিনাইদহের শোলাশিল্প,  চট্টগ্রামের তালপাতার  হাতপাখা, পাটজাত কারুপণ্য, লোকজ অলংকার শিল্প, নাগর দোলা, বায়স্কোপ ও মিঠাই মন্ডার পসরা থাকলে ষ্টলগুলোতে। মেলা উপলক্ষে ফাউন্ডেশন চত্বর বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।  বুধবার থেকে শুরু হওয়া মেলা ১৬ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত মাসব্যাপী চলবে।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম জানান, লোকজ ঐহিত্যকে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতি বছর মেলার আয়েজন করে থাকে। এ ঐহিত্যকে লালন করার জন্য লোক শিল্পীদের স্বর্ণ পদক দিয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © Sonargaonnews 2022
Design & Developed BY N Host BD