শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ
       
শিরোনাম :
সোনারগাঁওয়ে লোকশিল্প বিশারদ তোফায়েল আহম্মেদের মৃত্যু বার্ষিকীতে সেমিনার অনুষ্ঠিত সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা দিবস দাবায় সুদিন অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন, আনান রানার আপ সোনারগাঁওয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে প্রতিপক্ষের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ জাল দলিলে অসহায় নারীর জমি দখলে ছাত্রলীগ নেতা, উদ্ধার করলেন সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার  সোনারগাঁওয়ে মামলায় জামিন নিয়ে বাড়িতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার দুইজন মোগড়াপারায় হিফজুল কোরআন আজান ও নাতে রাসূল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সোনারগাঁওয়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে  স্বাধীনতা ও জাতীয়  দিবসে বিভিন্ন কর্মসুচি পালন স্বাধীনতা দিবসে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের নানা আয়োজন সোনারগাঁওয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হায়দারের উঠান বৈঠক

সোনারগাঁওয়ে র‌্যাব পরিচয়ে গুলি, বৃদ্ধ নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক,  সোনারগাঁও নিউজ :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এক যুবককে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাওয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে গুলির অভিযোগ উঠেছে। গুলিতে আবুল কাশেম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। শুক্রবার রাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।  নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। নিহত আবুল কাশেম বরগাঁও গ্রামের মৃত কদম আলীর ছেলে।

নিহতের স্ত্রীর দাবি, র‌্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক শুক্রবার দিবাগত রাতে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। পাশের বাড়ির পাশ্ববর্তী সেলিম নামের এক যুবককে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাওয়ায় উত্তেজিত হয়ে র‌্যাব পরিচয়দানকারীরা তার স্বামীকে কাছ থেকে সরাসরি তার সামনে পেটে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় হুমায়ুন কবির নামে আরো একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও নিহত আবুল কাশেমের ছেলে জহিরুল ইসলাম, দ্বীন ইসলাম, কিশোর সাইফুল ইসলাম ও মাহফুজ মিয়া রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে র‌্যাবের এ ঘটনার পর ওই এলাকায় আতংঙ্ক বিরাজ করছে। বরগাঁও গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়েছে ।

শনিবার সকালে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নিহত আবুল কাশেমের লাশের পাশে সোনারগাঁও থানার এসআই আনিছুর রহমানসহ তিনজন পুলিশ সদস্য পাহাড়ায় রয়েছেন। পাশে নিহতের চাচাতো বোন নাসিমা বেগম ও স্ত্রী রমিজা বেগম লাশের পাশে বসে কান্নাকাটি করছেন। সেখানে মানুষ জড়ো হয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা তাদের মুখে শুনছেন।

তবে র‌্যাব জানায়, এক হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করতে এ অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এসময় আসামি ছিনিয়ে নিতে র‌্যাবের ওপর হামলা হলে তারাও পাল্টা উত্তর দেয়। তবে নিহত কিভাবে মারা গেছেন সেই সম্পর্কে কোন কিছু জানা নেই।  তবে র‌্যাবের পক্ষ থেকে রোজিনা হত্যাকান্ডের সন্দেহভাজন আসামী সেলিমসহ ২৩ জনকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানায়, র‌্যাবের ওপর হামলা হয়েছে। পরে হামলাকারীদের কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরে তাদের আটক করা হয়। তবে সবাই অ্যারেস্টেড না। যাদের কনফার্ম করতে পেরেছি তাদের অ্যারেস্ট করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই চলছে। মামলা হলেই গ্রেপ্তারকৃতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এলাকাবাসীর দাবি, রোজিনা হত্যাকান্ডের সন্দেহভাজন আসামী সেলিম মিয়া ও জহিরুল ইসলাম ছাড়াও র‌্যাব সদস্যরা  আটক করে নিয়ে গেছেন নিহতের ছেলে নজরুল ইসলাম নাতি শ্রাবন ইসলাম, পারভেজ, রেদোয়ান, রাব্বী, হবুল হোসেন, অপু, সাকিব, রাকিব, এরফান মোনতাহা, আমান, মাহমুদুল্লাহ, নজরুল ইসলাম, জনি মিয়া, আইয়ুব খাঁন, রিফাত, হাফিজউদ্দিন, হযরত আলী, ইমান আলী, ইসমত আলী ও হাসান।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিহতের লাশের পাশে বসে বিলাপ করে তার স্ত্রী রমিজা বেগম বলেন, উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও চেয়ারম্যান পাড়া তাদের বাড়ি। শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার স্বামী ও তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়ে দিয়ে ঘরের বাইরে বের হন। এসময় বাড়ির পাশে রাস্তার মধ্যে কয়েকজনের চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনতে পান। রাস্তায় গিয়ে দেখতে পান তাদের পাশ্ববর্তী বাড়ির সেলিম নামের এক যুবককে কয়েকজন জিন্স প্যান্ট ও গেঞ্জি পড়া লোক টেনে হেচরে নিয়ে যাচ্ছেন। এসময় সেলিমের বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছে। বৃদ্ধ আবুল কাশেম ওই লোকদের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সাদা পোশাকধারীরা ওই বৃদ্ধকে লাঠি দিয়ে দুটি আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পরে। বৃদ্ধ উত্তেজিত হয়ে মাটি থেকে উঠে হৈ চৈ করে সাদা পোশাকধারীদের গালি দেয়। এক পর্যায়ে সাদা পোশাকধারীরা বৃদ্ধের পেটে গুলি করেন। পরে তাকে সোনারগাঁও  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্বজনরা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

নিহত আবুল কাশেমের ছেলে সাইফুল ইসলাম জানান, তার বাবা একজন বৃদ্ধ মানুষ। তার বাবা এ বয়সেও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করে জীবন যাপন করেন। তাদের পরিবার অসহায় পরিবার। র‌্যার পরিচয়ে গুলি করার পর আহত অবস্থায় তার বাবাকে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রাত ২টার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, রাত আড়াইটার সময় রেখে যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে তারা আবার গ্রামে আসেন র‌্যাব। পরে ও মোটরসাইকেলসহ গ্রামের প্রায় ২০-২২ জন লোককে আটক করে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী লোকজন।
সাদিপুর ইউনিয়ের বরগাঁও গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, গভীর রাতে গুলির শব্দ পাওয়ার পর এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা করে। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সাদা পোশাকধারী লোকজন গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়েন। এসময় হুমায়ুন কবির নামের একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও অনেকেই আহত হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্ছু মিয়া হুমায়ুন কবিরের গুলিবৃদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে পাশ্ববর্তী গজারিয়া পাড়া এলাকায় রোজিনা আক্তার নামের এক পোশাক শ্রমিককে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। তবে র‌্যাব পরিচয়ে অভিযান কারীদের গায়ে কোন র‌্যাবের পোশাক বা কটি ছিল না। ফলে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে তাদের ডাকাত বলে দাবি করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলে শুরু হয়ে তাদের মধ্যে এলাকাবাসীর তর্কবিতর্ক। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। র‌্যাবের পোশাকধারী হলে হয়তো তাদের কাছে গ্রেপ্তারের কেউ কোন কৈফিয়ত জানতে চাইতো না।

সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য মাইনুদ্দিন মিয়া জানান, র‌্যাব পোশাক পড়া না থাকায় স্থানীয়রা চিনতে পারেননি। এ ঘটনার খবর পেয়ে রাতে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ঘটনার পর পোষাক শ্রমিক হত্যাকান্ডে সন্দেহভাজন আসামীসহ প্রায় ২২ জনকে আটক করেছে র‌্যাব।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জিসান বলেন, রাত  আড়াইটার দিকে গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে জানা যায় হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ওই বৃদ্ধ মারা গেছেন। তার নাভির উপরে একটি বুলেটের চিহ্ন রয়েছে।

র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক ল্যাফটেনেন্ট কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, সোনারগাঁওয়ে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়েছে শুক্রবার। এ ঘটনার মূল সন্দেহভাজন আসামি সেলিমকে আটক করতে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। আসামিকে আটক করে নিয়ে আসার সময় র‌্যাবের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে র‌্যাব তাতে বাধা দেয়। এসময় তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আসামিকে আটক করে আমরা নিয়ে আসি। শনিবার আমরা জানতে পারি একজন মারা গেছেন। তবে সে কিভাবে মারা গেছেন তা আমরা নিশ্চিত না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, জানতে পেরেছি, শুক্রবার দিবাগত রাতে  সোনারগাঁওয়ে র‌্যাব-১১ এর একটি দল আসামি গ্রেপ্তারের জন্য যায়। আসামি গ্রেপ্তার করে ফেরার পথে কিছু দুষ্কৃতকারী আসামিকে ছিনিয়ে নিতে র‌্যাবের উপর আক্রমণ করে। তখন দুষ্কৃতকারীদের হামলায় র‌্যাবের সদস্যরা আহত হয়। র‌্যাবের উপরে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে বলেও জানতে পেরেছি। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব সদস্যরা পাল্টা গুলি করলে তাদের মধ্যে একটা সংঘর্ষ হয়। দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে গেলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে মারা যায়। র‌্যাবের চার সদস্যও গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় র‌্যাব মামলা করবেন। মামলার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © Sonargaonnews 2022
Design & Developed BY N Host BD