মনির হোসেন, জামপুর প্রতিবেদক ঃ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের জামপুরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ ও পার্শ¦বর্তী বিভিন্ন খালে বিভিন্ন শিল্প কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি ফেলে বিষাক্ত করে ফেলেছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র নদ ও খালের পানি ব্যবহার করতে পারছে না স্থানীয়রা। এছাড়াও এ বিষাক্ত পানি তেজক্রিয়ায় শরীরে চর্ম রোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ পানি পশু খাদ্যে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কৃষকরা সেচ মৌসুমে নদ ও খালের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারছে না। দূষিত পানির দুর্গন্ধে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা এ শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নিষ্কাশনের প্রতিবাদে একাধিকবার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করলেও কোন কাজে আসছে না। প্রতিকারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের তালতলা এলাকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য স্থানীয় মালিপাড়া ও বশিরগাঁও খাল দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলে পানি দূষিত করে ফেলে। এছাড়াও পাশ্ববর্তী আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন ডাংইয়ের রঙের পানি ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কালো করে ফেলেছে। এতে করে নদের পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষাক্ত পানি নদে ফেলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। গত শনিবার বিকেলে তালতলা এলাকায় জামপুর ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ভুইয়ার সভাপতিতে বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি ফেলে নদের পানি দূষিত করার প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র নদ ও বশিরগাঁও খালে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যের কারনে খালে স্তর পড়ে আছে। নদে এ পানি মিশ্রিত হয়ে দূষণ তৈরি হয়েছে। পানি সাদা পানি কালো হয়ে পড়েছে। এসময় এলাকাবাসী বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
তালতলা এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, তালতলা এলাকার মহিউদ্দিন পেপার মিল, গ্যাস্টন ব্যটারি ফ্যাক্টরি, বাগবাাড়িয়া এলাকায় একটি তারকাটার মিলসহ বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরির বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে নদীর ও খালের পানি নষ্ট করে ফেলেছে। এতে করে পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নদীর উপর জীবিকা নির্বাহকারী জেলেরা বেকার পড়েছেন।
জামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাসুদ কবির সুমন বলেন, নদ ও খালের বিষাক্ত পানি দৈনন্দিন কাজে ব্যাবহার দূরের কথা মাছ, সাপসহ কোন জলজ প্রাণীও বাচতে পারেনা। নদের পানিতে গোসল, রান্না, কৃষি জমিতে সেচ কাজে ব্যাবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
আওয়ামীলীগ নেতা আহসান হাবীব টিপু জানান, নদী ও খালের পানি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। পানির দুর্গন্ধ ও ক্ষতিকর গ্যাস মানুষের স্বাস্থের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ পানি ব্যবহার করতে না পেরে কয়েকহাজার বিঘা তিন ফসলি কৃষি জমির ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। জলজ প্রাণী, মাছ, সাপ, ব্যাঙসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ভূইয়া জানান, কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় ব্রহ্মপুত্র নদ ও বশিরগাঁও খালে নিষ্কাশন করায় আমার কাছে এলাকাবাসী প্রতিকারের জন্য এসেছেন। আমি স্থানীয়দের নিয়ে খাল ও ব্রহ্মপুত্র নদ পরিদর্শন করেছি। দূষিত পানির দুর্গন্ধে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিষয়টি ইউএনওকে অবগত করেছি।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী জানান, বিষয়টির তদন্ত করে দূষনের সঙ্গে জড়িত শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত দিন