বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁও নিউজ :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের নুনেরটেক উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ১০ মাসে ১৪টি বাল্য বিয়ে হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকার কারনে একের পর এক বাল্য বিয়ে হচ্ছে। ফলে কিশোরীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। বাল্য বিয়ের শিকার সকলেই নুনেরটেক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। আজ ২১ অক্টোবর শুক্রবার নুনেরটেক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী টেকপাড়া গ্রামের মৃত রুকু মিয়ার মেয়ে লিজার বাল্য বিয়ে হওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার প্রতিকামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
বাল্য বিবাহের শিকার শিক্ষার্থীদের পরিবার ও বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতা এবং অফিসের নথি ঘেঁটে জানা যায়, গত ১০ মাসে ১৪টি বাল্য বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে ৭শ শ্রেণীর ৩ জন। এদের মধ্যে টেকপাড়া গ্রামের নিপা আক্তার, গুচ্ছগ্রামের লিলি আক্তার ও সায়দাবাগ গ্রামের সুরাইয়া আক্তার। ৮ম শ্রেণীর ৬জন। এরা হলো নুনেরটেক ডিয়ারা গ্রামের রত্না আক্তার, হালিমা আক্তার, সায়দাবাদ গ্রামের সুমনা আক্তার, লিজা আক্তার, টেকপাড়া গ্রামের মুন্নি আক্তার, নুনেরটেক মধ্যপাড়ার সুমনা আক্তার। ৯ম শ্রেণীর টেকপাড়া গ্রামের মহারানী, শান্তা আক্তার। ১০ম শ্রেণীর রগুনারচর গ্রামের খাদিজা আক্তার, নুনেরটেক গ্রামের সোহানা আক্তার, ও আছিয়া বেগম। স্কুল ছাত্রী ছাড়াও ঝড়ে পড়া আরো অনেক শিক্ষার্থী ওই গ্রামে বাল্য বিয়ে হয়ে যায়। তাদের বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় নাম থাকলেও তাদের দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। তবে গ্রামবাসী ও কয়েকজন সহপাঠী তাদের বাল্য বিবাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী তাসলিমা আক্তার বলেন, সহপাঠীদের একের পর এক বাল্য বিবাহ হচ্ছে অনেকেই এখন সন্তানের মা। অভিভাবকেরা গোপনে তাদের অন্যত্র নিয়ে বিয়ে দিচ্ছেন। আবার অনেকের প্রকাশ্যে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার বিয়ে হয়ে গেছে। বাল্য বিবাহ রোধ করতে হলে আমাদের অভিভাবকদের সবার আগে সচেতন হতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী সোনারগাঁও নিউজকে জানায়, স্থানীয় মেম্বারকে ম্যনেজ করতে পারলেই বাল্য বিয়ে দেওয়া যায়। তিনিই প্রশাসন ও সাংবাদিকদের মেয়ের বয়স হয়েছে বলে নিশ্চুপ রাখেন।
অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, মেয়েকে প্রবাসী ছেলের কাছে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ে আরও বড় হলে যৌতুক নিতো। ছোট বিধায় কোন যৌতুক দিতে হয়নি।
নুনেরটেক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দিন সোনারগাঁও নিউজকে জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ স্কুলের ১৪টি বাল্য বিয়ে হয়েছে। এসব বিবাহের অধিকাংশই গোপনে ও অন্য এলাকায় হয়েছে। এ কারণে প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে দু’একটা বিয়ে বন্ধ করতে গেলে অভিভাবকরা খারাপ আচরণ করেন।
নুনেরটেক গ্রামের গৃহবধু আম্বিয়া খাতুন বলেন, এ গ্রামে যুগ যুগ ধরেই বাল্য বিবাহ হয়ে আসছে। বাল্য বিবাহের কারণে প্রসুতি ও শিশুরা নানা রোগে জর্জরিত হন।
নুনেরটেক কমিউনিটি ক্লিনিকের ভারপ্রাপ্ত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার আবু নাইম সোনারগাঁও নিউজকে জানান, এ গ্রামে বাল্য বিবাহের কারণে খুব কম বয়সে মেয়েরা মা হচ্ছে। ফলে সন্তান প্রসব করার পর মায়েরা অপুষ্টিতে ভোগেন।
বারদি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ওসমান গণি বলেন, বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে বাড়িতে গেলে জন্ম নিবন্ধনে সঠিক বয়স পাওয়া যায়। কিভাবে জন্ম নিবন্ধনে বয়স হয় আমার জানা নেই।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী সোনারগাঁও নিউজকে জানান, নুনেরটেক চরাঞ্চল হওয়ার কারনে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাদের সন্তানদের বাল্য বিয়ে দেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে অনেক বাল্য বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
আপনার মতামত দিন