বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:০৫ অপরাহ্ন
হাসান মাহমুদ রিপন :
পুষ্টিগুণে সমদ্ধ এক ফলের নাম আমড়া । এটি কিশোর ও টিনেজদের প্রিয় ফলও বটে। আর হ্যাঁ, সরিষা বাটা কিংবা কাসুন্দি দিয়ে আমড়ার ভর্তার কথা মনে করতেই নিজের অজান্তেই মুখে পানি এসে যায়। বিশেষ করে কিশোর ও টিনেজরা ঝাল লবন দিয়ে আমড়া খেতে খুবই পছন্দ করে। দু’রকমের আমড়া বাংলাদেশে জন্মে। একটি দেশী এবং অপরটি বিলাতি আমড়া। দেশী আমড়ার বৈজ্ঞানিক নাম স্পনডিয়াস ম্যাঙ্গিফেরা এবং বিলাতি আমড়া স্পনডিয়াস ডালসিস। এরা উভয়েই অ্যানাকার্ডিয়েস পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ।
পুষ্টিগুণে আমড়া অতুলনীয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ-বি-সি, ফসফরাস, লৌহ ও ক্যারোটিন প্রভৃতি বিদ্যমান। প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় প্রোটিন ১.১ গ্রাম, শ্বেতসার ১৫ গ্রাম, স্নেহ ০.১ গ্রাম, ভিটামিন বি-১(থায়ামিন) ০.২৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২(রাইবোফ্লাভিন) ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৯২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৫ মিলিগ্রাম, লৌহ ৩০৯ মিলিগ্রাম এবং ক্যারোটিন ৮০০ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে। এছাড়া আমড়ায় ৬৬ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি রয়েছে।
পুষ্টি উপাদান আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজন আমরা। যেসব রোগ ভিটামিনের অভাবজনিত কারণে হয়ে থাকে আমড়া খেলে সেসব রোগ হয় না। আমড়া দাঁত ও হাড়ের পুষ্টিসাধন করে। রক্তের বিশুদ্ধতা ও স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতেও আমড়ার পুষ্টিগুণ অপরিহার্য। স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন সি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর আমড়ায় আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। ফলে আমড়া খেলে স্কার্ভি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া ভিটামিন সি দাঁত, মাড়ি ও পেশি মজবুত করে। ভিটামিন সি সর্দিকাশি ও ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করে এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের দৈনিক ২০ মিলিগ্রাম এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের জন্য ৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিস সি গ্রহণ করা দরকার। আমড়ায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম
। দেহের হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য প্রচুর ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তাছাড়া শিশুকে মায়ের খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকা আবশ্যক। আমড়ায় যে লৌহ জাতীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা রক্তের লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। লৌহের অভাবে রক্তশূন্যতাজনিত রোগ দেখা দেয়। লৌহের ঘাটতি পূরণে আমড়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমড়া কাঁচা এবং পাকা অবস্থায় টাটকা খাওয়া যায়। রান্না করে তরকারি হিসেবে মোরব্বা, আচার ও চাটনি করেও খাওয়া যায়।
মোটকথা আমড়া পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ একটি আদর্শ ফল। একটি আমড়ায় তিনটি আপেলের সমান পুষ্টিগুণ রয়েছে। আমড়ায় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও লৌহ আপেলের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। আপেল আভিজাত্যের প্রতীক হলেও আমড়ার তুলনায় আপেলের পুষ্টিমূল্য অনেক কম। তাই গরীব জনসাধারণ যারা আপেল কিনে খেতে পারেন না তাদের পুষ্টি জোগাতে আমড়ার জুড়ি নেই।
আপনার মতামত দিন